মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫৪ অপরাহ্ন

শীর্ষ সংবাদ :
সংবাদ সম্মেলনে যুবদল নেতা যুবলীগ আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে ছাত্র-জনতার উপর হামলা মামলায় বিশ্বম্ভরপুর আ.লীগের সভাপতি সহ ৫ জন কারাগারে অসমর্থ মানুষের জন্য ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হবে… জেলা ও দায়রা জজ মাহমুদুল হাসান শাল্লায় বজ্রাঘাতে কলেজ ছাত্রের মৃত্যু সুনামগঞ্জে ট্রাফিক এর ভূমিকায় ইয়ূথ পিস এম্বাসেডররা দিরাইয়ে বড় ভাইকে না পেয়ে ছোট ভাইকে খুন দিরাইয়ে রাতের আঁধারে ধানের মুটে আগুন  সুনামগঞ্জ সদর ওয়েভ গ্রুপ গঠন শান্তিগঞ্জে মামলার আসামী নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠনের নেতাদের গ্রেপ্তারের না করায় জনমনে উদ্বেগ ছাত্রীদের দাবি আওয়ামী লীগের মন্ত্রীর বাড়ীতে নিরাপত্তায় আছি

আজ ঐতিহ্যবাহী ধলের মেলা 

দিরাই প্রতিনিধি: :
‘বারো মাসে তের পার্বণ’ আমাদের দেশে প্রচলিত এই প্রবাদটি মনে করিয়ে দেয় বাংলার উৎসবের প্রাচুর্যতার কথা। এ দেশে এমন কোনো ঋতু বা মাস নেই, যখন কোথাও না কোথাও কোনো না কোনো উৎসবকে কেন্দ্র করে মেলা বসে না। সব বদলালেও বদলায়নি আমাদের চিরচেনা গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী মেলা এবং উৎসব গুলো। তারই ধারাবাহিকতায় বুধবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ধলের মেলা। ২১শে পদক প্রাপ্ত শাহ আব্দুল করিমের স্মৃতি ধন্য কালনী নদীর কুল ঘেঁষে ধল গ্রামে বুধবার অনুষ্ঠিত হবে ঐতিহ্যবাহী ধলের মেলা। ইতমধ্যেই মেলা মাঠে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যাবসায়ীরা এসে দোকান খোলে বসেছেন। প্রায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হবে বলে অনেকেই মনে করছেন। এ জন্য করা হয়েছে মেলা পরিচালনা কমিটি। অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর জনসমাগম বেশী হবে বলে জানিয়েছেন মেলা কমিটির অনেকে।
জানা যায়, আজ থেকে প্রায় আড়াইশ বছর আগে ধল গ্রামের মাঠে একটি পরমেশ্বরী শিলা দেখা যায়। এর পর থেকে এ শিলাতে হিন্দু ধর্মালম্বীরা ফাল্গুন মাসের প্রথম বুধবার ভেড়া, মহিষ বলি দিয়ে পুঁজা করতে থাকেন। এবং ঐ দিন মাঠে বিভিন্ন ধরনের জিনিস পত্রের ফসরা সাজিয়ে বসেন দোকানদাররা। ধলের মেলাকে কেন্দ্র করে দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের ধল মেলা মাঠে সেজেছে নতুন সাজে। এ দিনটি এ এলাকার একটি সামাজিক অনুষ্ঠানের দিনে পরিণত হয়েছে। দিরাই উপজেলার তাড়ল, কুলঞ্জ ও জগদল ইউনিয়নে এবং পার্শ্ববর্তী শাল্লা, নবীগঞ্জ ও জগন্নাথপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষ সড়াসড়ি এ মেলার সাথে জড়িত। তাই মেলাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকার প্রত্যেক ঘরে ঘরে মেহমান আসতে শুরুর করেছে। সব চেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে এ এলাকার জামাইরা অবশ্যই ওই দিন শশুর বাড়িতে আসতে হবে। নতুবা শশুর বাড়ীর মানুষেরা মনে কষ্ট পান তবে বেশী কষ্ট পায় শালা শালীরা।
এ মেলার আকর্ষণীয় জিনিস হচ্ছে বেল এবং কুইয়ার (ইক্ষু)। তবে ধই, মুড়ি এবং রসগোল্লা খেতে ভুল করেন না কেউ। এ মেলা নিয়ে শাহ আব্দুল করিম ‘ধলের মেলা’ নামে একটি বই লিখেছেন। শাহ আব্দুল করিম তার এক গানে বলেছেন, ফাল্গুণে এসেছে ধলের মেলা/ যাবি যদি আয় দলে দলে, উঠেছে বেলা। শাহ আব্দুল করিমের গানের সাথে তাল মিলিয়ে এলাকার মানুষ দলে দলে মিলিত হয় ধলের মেলায়। প্রতি বছর উক্ত মেলায় যাত্রা গান, বাউল গান, সার্কেস সহ বিভিন্ন বিনোদনের আয়োজন করা হয়। শাহ আব্দুল করিমের শিষ্যরা আয়োজন করেন ”করিম গীতির’ আসর সারা রাত তাদের আসরে গাওয়া হয় শাহ আব্দুল করিমের গান। সন্ধ্যার পর মনে হয় কালনীর পার সেজেছে আপন সাজে সিলেট, সুনামগঞ্জ এবং দিরাই শহরের বড় বড় ব্যাবসায়ীরা তাদের নিজস্ব দোকান নিয়ে এসেছেন মেলাতে। ধনী দরিদ্র সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছেন মেলার জন্য। হাওরাঞ্চলে ফাল্গুন চৈত্রমাসে মানুষের হাতে কোন কাজ থাকেনা। এসময় কৃষকরা অপেক্ষায় থাকেন কবে সোনালী ধান পাকবে। সে সময়টায় মানুষ চিত্ত বিনোদনে মেতে উঠে। একসময় ধলের মেলা ছিলো এ এলাকার মানুষের চিত্ত বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম। মেলার মাস খানেক আগ থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে যাত্রা শিল্পীদের সংগ্রহ করা হতো। মেলার দিন মঞ্চস্থ করা হতো নিমাই সন্ন্যাস, রহিম বাদশা রূপবান কন্যা, রাজা হরেশ চন্দ্র সহ বিভিন্ন যাত্রাপালা। সার্কাস, পুতুল নাচ আর বাউল গানের আসর বসতো এ মেলাকে কেন্দ্র করে। কিন্তু কালের পরিক্রমায় তা আজ হারিয়ে গেছে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2025 surmapostnewsbd.com
Design & Developed BY Ohhre Technologies Limited.