মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১৮ পূর্বাহ্ন
শাল্লা প্রতিনিধি::
শেখ হাসিনা সরকার পতনের আগে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে উপজেলা পরিষদ থেকে গ্রামীণ জনপদ ও রাস্তাঘাট মেরামতের জন্য এক লক্ষ টাকা বরাদ্দপান উপজেলার ৩নং বাহাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য বাসন্তী রাণী দাশ। অত্র ইউনিয়নের উজান-যাত্রাপুর গ্রাম সংলগ্ন হাওরে রাস্তার কাজটি তদারকির দায়িত্ব পান ওই গ্রামের পিন্টু চন্দ্র দাস। কিন্তু বাসন্তি রাণী দাশ প্রকল্পের সভাপতি হওয়া সত্ত্বেও, রাজনৈতিক প্রভাব কাটিয়ে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ আলাউদ্দিনকে ম্যানেজ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ১ম কিস্তির পঞ্চাশ হাজার টাকা তুলে নেন তৎকালীন স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রভাবশালী নেতা সন্দীপন তালুকদার সুজন। তিনি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রভাব কাটিয়ে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আলাউদ্দিনকে ম্যানেজ করে নেন সুজন। প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের অফিস সহায়ক পিন্টু খানকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে প্রকল্প সভাপতির স্বাক্ষর ছাড়াই স্বেচ্ছাসেবক লীগের ওই নেতার হাতে চেক তুলে দেন পিন্টু। সুজনকে চেক দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে পিন্টু বলেন, ইউএনও স্যার বলার পরে আমার কি করার আছে ভাই? তবে তিনি বলেন আমরা চেক দিলেও ব্যাংক কিভাবে তাকে টাকা দিলো? তিনি বলেন বিষয়টি নিয়ে লেখালেখি করলে আমি ফেঁসে যাবো। তাই এবিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ তিনি।
এদিকে (পিআইও) অফিস থেকে চেক নেওয়ার পরে সোনালী ব্যাংকে চেকে স্বাক্ষর জালিয়াতি করে টাকা তুলে নেন সন্দীপন। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন প্রকল্পের সভাপতি বাসন্তী রাণী দাশ ও প্রকল্পের সদস্য পিন্টু চন্দ্র দাস। প্রকল্পের সভাপতি ইউপি সদস্য বাসন্তি রাণী দাশ জানান, আমি হাওরে একটি প্রকল্প এনেছি। কিন্তু পিআইও অফিস প্রথম কিস্তির টাকা আমাকে না দিয়ে সন্দীপন তালুকদার সুজনকে দিয়েছে। আমি কোন স্বাক্ষরও দেইনি টাকাও আনিনি। তিনি বলেন প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের পিন্টু, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সন্দীপন তালুকদার সুজনকে চেক দিয়ে দেয়। সেই চেক দিয়ে আমার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেয়। আমি ব্যাংকেও স্বাক্ষর দেইনি। তিনি বলেন চেক দিয়েছে অন্যজনকে আমি স্বাক্ষর দেবো কেন? চেক বা রেজিস্টারে আমি কোন স্বাক্ষর দেইনি। তিনি বলেন ইউএনও পিন্টুকে বলার পরেই সন্দীপনকে চেক দিয়ে দেয়। অফিস সহায়ক পিন্টুর প্রতি অভিযোগ করে বাসন্তী রাণী দাশ আরো বলেন পরে আমি জানতে পারি পিন্টু খান নিজেই অফিসের রেজিস্টারে আমার স্বাক্ষর দিয়ে দেয়। তিনি বলেন আমি এখনো সিলেটে আছি আসার পর আইনের দারস্থ হবো।
সোনালী ব্যাংক শাল্লা শাখার ম্যানেজার দেবব্রত মিশ্র এবিষয়ে তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন লিখিত আবেদন করেন তারপর কি করা যায় দেখা যাবে।
এবিষয়ে অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সন্দীপন তালুকদার সুজন বলেন, তুমি যদি নিউজ করতে চাও নিউজ করো। প্রকল্প কমিটির অনুমতি ছাড়া পিআইও অফিস অন্যজনকে চেক দিতে পারে না।
তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আলাউদ্দিনকে তার ব্যক্তিগত নাম্বারে ফোন করা হলে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ফোন কেটে দেন। পরবর্তীতে একাধিকবার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে তৎকালীন শাল্লা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (অ:দা) মুনীর হোসেন বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী প্রকল্প সংশ্লিষ্টরাই বিল পেয়েছে। বর্তমান প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ নুরুন্নবীও এবিষয়ে কোন কথা বলতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে তিনি এই প্রতিবেদকের সাথে অসদাচরণ করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিয়াস চন্দ্র দাস বলেন, বিষয়টি এক সময়ে খোঁজখবর নিলেও এখন নতুন করে আর কোনকিছু জানি না।