মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪১ পূর্বাহ্ন

শীর্ষ সংবাদ :
সুনামগঞ্জ মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সাথে কলেজ প্রশাসনের একাত্মতা ছাতকে পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৫ আসামি গ্রেফতার জামালগঞ্জে ওয়েভ গ্রুপ গঠন একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম অনিদিষ্ট কালের জন্য শাটডাউন নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত গণতান্ত্রিক আন্দোলন অব্যাহত থাকবে… মিজান চৌধুরী সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে সুজনের মানববন্ধন শান্তিগঞ্জ বাজারে সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন ও জনসংযোগ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মিলনের রোগ মুক্তি কামনায় দিরাইয়ে দোয়া মাহফিল শাল্লায় ইউপি সচিবের প্রোফাইলে শেখ মুজিবুরের ছবি!  ছাতকে নাসির বিড়ি ও মোটরসাইকেল সহদুই চোরাকারবারী আটক

শ্রমিক ও জননেতা প্রতাপ উদ্দিন আহম্মেদ ২৭ তম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত

স্টাফ রিপোর্টার::

জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আপোসহীন শ্রমিক জননেতা প্রতাপউদ্দিন আহম্মেদের ২৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়। বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির উদ্যোগে বিকাল ৩:৩০ মিনিটে সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয়ের সম্মুখ হতে একটি লাল পতাকা রেলী সুনামগঞ্জ শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ জগৎ জ্যোতি মিলনায়তনে বিকাল ৪ টায় আলোচনা সভায় মিলিত হয়।
বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি সুখেন্দু তালুকদার মিন্টুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম ছদরুলের পরিচালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান কবির, বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি রত্নাংকুর দাস জহর, ধ্রুব তারা সাংস্কৃতিক সংসদ সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি সৌরভ ভূষন দেব, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি দিপ্তি সরকার, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সহসভাপতি আমির উদ্দিন, কবি ও লেখক ইকবাল কাগজী, স মিল শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি আইয়ুব,রহমান, স মিল শ্রমিক সংঘ সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনির মিয়া, বারকি শ্রমিক সংঘ সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি নাসির মিয়া,সাধারণ সম্পাদক ফরিদ মিয়া, হকার্স শ্রমিক সংঘ সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি আব্দুল হাই, সুনামগঞ্জ রিক্সা ভ্যান শ্রমিক সংঘ সদর উপজেলা কমিটির সভাপতি আব্দুর রউফ, সহ সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম, প্রমূখ।
সভার শুরুতে শ্রমিকনেতা প্রতাপ উদ্দিনের জীবনী পাঠ করেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সহসভাপতি আবুছাদাত আহমদ টিটু ।
উল্লেখ্য, প্রতাপউদ্দিন আহম্মেদ এর সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ, আমলা দালাল পুঁজি বিরোধী জাতীয় মুক্তির লড়াইয়ের অন্যতম কান্ডারী। তিনি ছিলেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন, লঞ্চ লেবার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ- স্কপের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য। তিনি আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থা- আইএলও- এর সঙ্গে সম্পর্কিত ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেশন কমিটি অব ওয়ার্কার্স এডুকেশন- এনসিসিডব্লিউই- এর কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন।

প্রতাপউদ্দিন ছিলেন আপোসহীন এবং আজীবন সংগ্রামী নেতা। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে ১৯৩০ সালে বর্তমান হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ থানার মোস্তফাপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের মাত্র আড়াই বছর বয়সে তাঁর মা মারা যান। বাবা এরশাদউল্লা ছিলেন একজন (সি-ম্যান) জাহাজী শ্রমিক। সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় প্রতাপউদ্দিন কলকাতা যান। এই অল্প বয়সে তাঁকে উপার্জনের পথ বেছে নিতে হয়। তিনি ইন্ডিয়ান সি-ম্যান ইউনিয়নের সাথে যুক্ত হন। পরবর্তীতে এই ইউনিয়নের কালেক্টর (সদস্য চাঁদা আদায়কারী) নিযুক্ত হন। চাকরির পাশাপাশি লেখাপড়ার কাজও চালিয়ে যান। তিনি ঐ সময় এইচএসসি পাশ করেন। রাজনৈতিক কারণে লেখাপড়া আর বেশি দূর এগোয়নি।

ইন্ডিয়ান সি-ম্যান ইউনিয়নের নেতা মনসুর জিলানীসহ অন্যান্যদের সাথে তিনি যোগাযোগ গড়ে তোলেন। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা এম.এ. সামাদ, শেখ সালেহ, আবদুল হালিম খান, জ্যোতি বসু সহ অনেকের সংস্পর্শে আসেন এবং কমিউনিস্ট আদর্শ গ্রহণ করেন। যে আদর্শের জন্য মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত গণমানুষের স্বার্থে সংগ্রাম করার শক্তি পেয়েছেন। ১৯৫২ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সভ্যপদ পান। আন্দোলনের অভিযোগে পাকিস্তানের নাগরিক হিসাবে চিহ্নিত করে সরকার ১৯৬৫ সালে তাঁকে ভারত থেকে বহিস্কার করলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশে) চলে আসেন। পূর্ব পাকিস্তানে আসার পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির সাথে তাঁর যোগাযোগ হয়। প্রয়াত কমিউনিস্ট নেতা কমরেড আবদুল হক, মনি সিংহ, খোকা রায়, অনিল মুখার্জীর সাথে তাঁর সম্পর্ক গড়ে উঠে। ১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙ্গে যাওয়ার পর তিনি কমরেড আবদুল হকের নেতৃত্বাধীন পার্টির সাথে যুক্ত থাকেন। মৃত্যুর দিন পর্যন্ত এ সম্পর্ক অটুট ছিল।

প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ছিলেন। লঞ্চ শ্রমিকরা তাদের পূর্ব পরিচিত প্রতাপউদ্দিনকে নিজেদের মাঝে পেয়ে তাদের নেতা নির্বাচন করেন। এই সংগঠনের নেতৃত্বে আসার পর ১৯৬৯ সাল থেকে নৌ-যান শ্রমিকদের আন্দোলন জোরদার হতে থাকে। নৌ-যান শ্রমিকরা তৎকালীন আইনে শ্রমিক হিসাবে স্বীকৃতি পায়নি। আন্দোলনের পরিণতিতে শ্রমিক হিসাবে তারা স্বীকৃতি পান এবং মালিক পক্ষের কাছ থেকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা আদায় করতে সক্ষম হন। তিনি নৌ-যান শ্রমিকদের অবিসংবাদি নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন।

১৯৭৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার বাকশাল গঠন করার পর বাকশালে যোগদানের জন্য দেশের বিভিন্ন কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃস্থানীয়দের ওপর ফ্যাসীবাদী কায়দায় তীব্র চাপ সৃষ্টি করে। প্রতাপউদ্দিন আহম্মেদের ওপরও বাকশালীরা এই চাপ সৃষ্টি করে। তাঁর আদর্শিক দৃঢ়তা এবং সাহসিকতার কারণে বাকশালীরা তাঁকে দলে আনতে ব্যর্থ হয়। ১৯৭৫ সালে পুনরায় নৌ-যান শ্রমিকদের সংগঠনে শক্তিশালী করার কাজে ব্রত হন। ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ। এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পদে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত ছিলেন। ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ, কৃষক সংগ্রাম সমিতি ও জাতীয় ছাত্রদলের সমন্বয়ে ১৯৮৮ সালে গঠিত হয় জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট। তিনি এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং আমৃত্যু এই পদে আসীন থাকেন। তিনি বাংলাদেশের শ্রমিকদের প্রতিনিধি হিসাবে আইএলও সভায় দুবার প্রতিনিধিত্ব করেন।

তিনি বাংলাদেশের হোটেল রেষ্টুরেন্ট ও সুইটমিট প্রতিষ্ঠানে শ্রম আইন লংঘনের অভিযোগ আইএলও-তে তুলে ধরেন। সরকার ওয়াদাবব্ধ হয়েও আজ পর্যন্ত এ সব শিল্পে শ্রম আইন বাস্তবায়ন করেনি।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2025 surmapostnewsbd.com
Design & Developed BY Ohhre Technologies Limited.