মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ০৭:০৩ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার::
সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস জেলা শহরের কাছাকাছি স্থাপনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে জানায় ‘সুবিপ্রবির স্থায়ী ক্যাম্পাস জেলা সদরে বাস্তবায়ন আন্দোলন’।
বুধবার বিকেল ৩টার দিকে সুনামগঞ্জ শহীদ জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপ শুরু করার মধ্যেই নানা মেরুকরণ তৈরির চেষ্টা করছে ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদী চক্র। এরা মূলত নানা রকম মুখোশের আড়ালে তৎপর ছিল। এদের একটি অংশের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। বাকিদেরও খোলস খসে পড়বে ইনশাআল্লাহ। আজ আমরা আমাদের আন্দোলনের মুখপত্র হিসেবে প্রথম একটি লিফলেট প্রচার করব। জেলার প্রতিটি উপজেলা কমিটির মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকায় এই লিফলেট বিলি করা হবে। এতে সম্পৃক্ত রাখার চেষ্টা করা হবে শিক্ষার্থী ও তরুণদের। গদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন প্রচারণাও একই সঙ্গে চলবে।
আন্দোলনের একজন মুখপাত্র হিসেবে আমি আমাদের মূল দাবির সঙ্গে সম্পূরক আরও কিছু দাবি প্রস্তাব আকারে উত্থাপন করছি, তা আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত আকারে প্রকাশ করা হবে এবং ভবিষ্যৎ আন্দোলনের চূড়ান্ত ধাপে এসব দাবি আদায়ে সচেষ্ট থাকা হবে। আমরা আরও একটি বিষয়ে এখানে পরামর্শ ও প্রস্তাব তুলতে চাই। সেটি মানবিক ও সরকারের অর্থ সাশ্রয় বিষয়ক। আপনারা দেখেছেন যে, জেলা সদর তথা শহরে বিভিন্ন স্থাপনা বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শান্তিগঞ্জের গ্রাম এলাকার বিভিন্ন বাসাবাড়ি ভাড় করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। যা একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য অমানবিক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র থেকে আমরা জেনেছি যে, এসব বাসাবাড়ি-স্থাপনা ভাড়া নিতে গিয়ে সরকারের অতিরিক্ত টাকা ব্যয় দেখানো হচ্ছে এবং অর্থেরও নয়ছয় করা হচ্ছে। বর্তমান ভিসি ও তার প্রশাসন এই আর্থিক অনিয়মে জড়িত। এ ঘটনার তদন্ত দাবির পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আবাসন অসুবিধা লাঘবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
আপনারা নিশ্চয় অবহিত আছেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসিকে (ভাইস চ্যান্সেলর) আমরা বলেছিলাম ফ্যাসিবাদীর সিন্ডিকেট পুরোটা বাতিল করতে। নতুন সিন্ডিকেট গঠনে আমাদের আন্দোলনে সক্রিয় সিনিয়র সিটিজেন তথা বিভিন্ন সেক্টরে মেধাবী ও প্রাজ্ঞজনকে সিন্ডিকেট মেম্বারের তালিকা করে তা যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠাতে। কিন্তু ভিসি এই প্রস্তাবে তড়িঘরি করে তার আজ্ঞাবহদের সিন্ডিকেট মেম্বার করার অপতৎপরতা শুরু করে দিয়েছেন। আমরা বিভিন্ন সূত্র মাধ্যমে জানতে পেরেছি, ভিসি ফ্যাসিবাদীদের পরামর্শ নিয়েই এ কাজটি করেছেন। তাই এই ভিসি জেলাবাসীর য্যৌক্তিক আন্দোলনের একজন বিরোধী লোক। তাকে নিরপেক্ষ ভাববার অবকাশ নেই। ফ্যাসিবাদের দোসর ভিসিকে প্রত্যাহার করতে হবে। সিলেটের কৃতিসন্তানদের মধ্য থেকে নতুন ভিসি নিয়োগ করতে হবে। ফ্যাসিবাদী সময়ে গঠন করা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট বাতিল ঘোষণা করে সুনামগঞ্জের শিক্ষাবিদ, বিদ্যুৎসাহী, সুধীজন থেকে সিন্ডিকেট সদস্য করতে হবে। জেলার স্থায়ী বাসিন্দাদের মধ্য থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে কর্মকর্তা ও তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ডিঙি নৌকার আদলে উদ্ভট বিশ্ববিদ্যালয় লোগো বাতিল করে সুনামগঞ্জের ঐতিহ্য ও শিক্ষার তাৎপর্যপূর্ণ নতুন লোগো করতে হবে।
শান্তিগঞ্জে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অস্থায়ী ছাত্রীনিবাস করে দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে আছেন। এই অতঙ্ক অমূলক নয়। আমরা অস্থায়ী ছাত্রী নিবাসটি অবিলম্বে জেলা শহরে স্থানান্তর করে শিক্ষার্থীদের শংকা দূর করার দাবি জানাই। নতুবা সেখানে কোনো অঘটন ঘটলে দায় বিশ্ববিদ্যালয়কে নিতে হবে।
এটা কোনো আঞ্চলিক আন্দোলন নয়। সুনামগঞ্জ জেলা সদর তথা জেলা শহর সমগ্র জেলাবাসীর। অতীতে সর্বদলীয় রাজনীতির ঐকতান হিসেবে আমরা ঐতিহ্য রক্ষার পরম্পরায় একাত্ম হয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক একটি বিদ্যুৎসাহী সমাজ শহরের সুবিধায় গড়ে ওঠার প্রত্যাশার সঙ্গে সুনামগঞ্জ জেলার উন্নয়ন একমুখী করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সকলকে সোচ্চার হওয়ার উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের আহ্বায়ক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট হুমায়ূন মঞ্জুর চৌধুরী।
বক্তব্য রাখেন, জামালগঞ্জ উপজেলা বিএনপির নাবেক সভাপতি আব্দুর রব, জেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক আনিছুল হক, দিরাই উপজেলা বিএনপির সদস্য হুমায়ূন কবির তালুকদার, শাল্লা উপজেলা বিএনপির প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল আওয়াল, বিশ্বম্ভরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বপন কুমার বর্ম্মণ প্রমূখ।