বুধবার, ০৯ Jul ২০২৫, ০২:০৯ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার:
টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটন নিয়ে একের পর এক বিতর্কিত ঘটনা ঘটে চলেছে। সম্প্রতি একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়, যেখানে দেখা যায়, এক নারী মদের বোতল হাতে নাচছেন, রিলস করছেন এবং পানিতে ভিজে উম্মাদনায় মাতছেন। ঘটনাটি নিয়ে হাওরজুড়ে তৈরি হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। স্থানীয়রা বলছেন, এ ধরনের পর্যটন হাওরের পরিবেশ, সংস্কৃতি এবং সামাজিক কাঠামোর সাথে কোনোভাবেই মানানসই নয়।অনেকে বলছেন টাঙ্গুয়ার হাওর এখন অসামাজিক কার্যক্রমের আস্তানা। কেউ কেউ বলছেন এটা ফ্রি সেক্স জোন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন পরিবেশবিদ ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। ভিডিওতে দেখা যায়, এক নারী ডিঙি নৌকায় বসে প্রকাশ্যে মদপান করছেন এবং তা রেকর্ড করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
হাওর পাড়ের অনেকে জানান, “হাউসবোটে মদের আসর নতুন কিছু নয়। পানি শুকিয়ে গেলে প্লাস্টিক ও মদের বোতলে হাওরের তলদেশ ঢেকে যায়। এতে কৃষি হুমকির মুখে পড়ে।” তারা বলেন, “হাউসবোট পর্যটকদের তালিকা রাখা বাধ্যতামূলক করা উচিত, যাতে অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যায়।”
হাউসবোট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আরাফাত হোসেন জানান, “ঘটনার ভিডিওতে দেখা নারীর পরিচয় এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কোন হাউসবোট থেকে তিনি এসেছিলেন তাও নিশ্চিত নয়। তবে ঘটনাটি নৌকা থেকেই ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।”
পরিবেশবিদ সালেহীন চৌধুরী শুভ বলেন, “হাওরে প্রকাশ্যে মদপান এবং তা প্রচার করা শুধু বেআইনি নয়, এটি চূড়ান্ত রকমের সামাজিক অবক্ষয়। প্রশাসনকে দ্রুত পর্যটকদের জন্য বিধিমালা তৈরি করতে হবে।”
সুনামগঞ্জ পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল করিম সাইদ বলেন, “আমরা বহুদিন ধরে হাওরের পরিবেশ রক্ষায় আন্দোলন করছি, কিন্তু প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। হাওরের সংস্কৃতি, জীববৈচিত্র্য ও কৃষি চরম হুমকির মুখে।”
তাহিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাসেম বলেন, “ঘটনাটি জানার পর আমরা হাউসবোট মালিকদের সতর্ক করেছি। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে প্রশাসন সচেষ্ট থাকবে।”
টাঙ্গুয়ার হাওর শুধু একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থান নয়, এটি স্থানীয় সংস্কৃতি, জীববৈচিত্র্য ও কৃষিনির্ভর জীবনের কেন্দ্র। পর্যটনের নামে যদি হাওর পরিণত হয় অসামাজিক কর্মকাণ্ডের আস্তানায়, তাহলে এর অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে—এমনটাই মনে করছেন সচেতন মহল।