সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:২৮ পূর্বাহ্ন

দিরাইয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৪৫ শতাংশ, রাজনীগঞ্জ কলেজে সবচেয়ে খারাপ ফলাফল

দিরাই প্রতিনিধি::
২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে দিরাই উপজেলার শিক্ষাব্যবস্থার চিত্র অত্যন্ত হতাশাজনকভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। উপজেলার ৯টি কলেজ ও উচ্চ বিদ্যালয়ের সম্মিলিত ফলাফলে দেখা গেছে, মোট ১,৭০০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৭৬৫ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। পাশের হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪৫ শতাংশ, যা জাতীয় গড়ের তুলনায় অনেক নিচে। শিক্ষার মানে উদ্বেগজনক পতন, ব্যতিক্রম শুধু কিছু প্রতিষ্ঠান। এ জন্য অভিভাবকরা দায়ী করেছেন শিক্ষকদের রাজনীতির লেজুরভিত্তিকে। শিক্ষকরা কলেচে পাঠদানের চেয়ে টিউশনী ও রাজীনিত নিয়ে বেশী সময় পার করায় ফলাপলের এমন পরিনতি বলে মনে করছেন অনেকে।
উপজেলায় ফলাফলের মধ্যে সবচেয়ে ভালো করেছে দিরাই কলেজ। প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৮৫০ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয় এবং ৪৮৪ জন উত্তীর্ণ হয়। পাশের হার ৫৬.৯৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ জন। ফলাফলের দিক থেকে তারা উপজেলা পর্যায়ে প্রথম স্থানে রয়েছে।
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিবিয়ানা মডেল কলেজ। প্রতিষ্ঠানটি একসময় জেলার সেরা ফলাফল করে থাকলেও এবার তাদের পারফরম্যান্সে ধস নেমেছে। ৩৬৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৮১ জন পাশ করেছে, পাশের হার ৪৯.৮৬ শতাংশ। তবে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক দিয়ে তারা এগিয়ে আছে, মোট ৮ জন এই কৃতিত্ব অর্জন করেছে। তৃতীয় স্থানে রয়েছে হাতিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ। ১২২ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে ৪৩ জন পাশ করেছে, পাশের হার ৩৫.২৫ শতাংশ।এরপর ফলাফলের ধারাবাহিক পতন চোখে পড়ে। অষ্ট্রগ্রাম কলেজে পাশের হার ২৬.৬৭ শতাংশ, বাংলাদেশ ফিমেইল একাডেমি-যা একসময় শতভাগ পাস করতো-এবার পাস করেছে মাত্র ১০ জন (৪৫ পরীক্ষার্থীর মধ্যে), পাশের হার ২২.২২ শতাংশ।

চরম হতাশার চিত্র দেখা গেছে পরবর্তী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে। ষষ্ঠ চরনারচর এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে ১৯ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ৩ জন। পাশের হার ১৫.৭৯ শতাংশ। সপ্তম জগদল কলেজে ৮৭ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ১৪ জন। পাশের হার ১৬.০৯ শতাংশ। অষ্টম সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মহিলা কলেজে ১৩৭ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পাশ করেছে ১৯ জন। পাশের হার ১৩.৮৭ শতাংশ। এদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ফলাফল করেছে রজনীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ। ৪৭ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে মাত্র ৩ জন পাশ করেছে। পাশের হার মাত্র ৬.৩৮ শতাংশ। জেলার মধ্যে সর্বনিম্ন ফলাফলের তালিকায় তাদের অবস্থান শীর্ষে।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, এই ফলাফল প্রমাণ করে যে দিরাই উপজেলার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদানের মান, শিক্ষকের দক্ষতা ও শিক্ষার্থী প্রস্তুতিতে ঘাটতি রয়েছে।
শিক্ষাব্যবস্থায় নজরদারি, নিয়মিত ক্লাস নেওয়া, মানসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব পূরণ এবং ছাত্রছাত্রীদের প্রতি অভিভাবক ও সমাজের দায়িত্বশীল ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষা ব্যবস্থার এমন করুণ চিত্র আশঙ্কাজনক। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ব্যতিক্রম হয়ে থাকলেও সামগ্রিক চিত্র যথেষ্ট উদ্বেগজনক। এখনই যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2025 surmapostnewsbd.com
Design & Developed BY Ohhre Technologies Limited.