সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:২৩ পূর্বাহ্ন

যাদুকাটায় তীর কেটে বালু লুট: কমিশন নিয়েও প্রতিবাদের নাটক?


স্টাফ রিপোর্টার::

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তঘেঁষা যাদুকাটা নদীতে নদীতীর কেটে উৎসব করে বালু লুট চললেও স্থানীয় প্রশাসন বা ইজারাদার পক্ষ থেকে তেমন কোনো কার্যকর প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। বরং বালু লুটের পর সংবাদ সম্মেলন করে ‘প্রতিবাদ’ জানিয়েছেন বালু মহালের ইজারাদার নাসির মিয়া।
তবে এই ‘প্রতিবাদ’ নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকৃতপক্ষে বালু লুটকারীদের কাছ থেকে ‘কমিশন’ আদায় করেই নির্বিঘ্নে লুটের সুযোগ করে দিয়েছেন এই ইজারাদার ও তার লোকজন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সুনামগঞ্জ শহরের পুরনো বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন যাদুকাটা ১ নম্বর বালু মহালের ইজারাদার নাসির মিয়া। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি সঠিকভাবে ব্যাখ্যা দিতে পারেননি—বালু লুট হওয়ার পরই কেন এতো দেরিতে সংবাদ সম্মেলন করা হলো।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে অন্তত ৫০ কোটি টাকার বালু অবৈধভাবে উত্তোলন করা হয়েছে যাদুকাটা নদীর বিভিন্ন অংশ থেকে। নদীর ইজারা এলাকার বাইরের তীর কেটে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র বালু তুলছে, যাদের কাছ থেকেও ইজারাদারের লোকজন ‘ফুটপ্রতি ২৫ টাকা’ হারে কমিশন আদায় করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
ফাজিলপুর এলাকায় নদীর পাড়ে টংঘর বসিয়ে টোল আদায় করছে ইজারাদারের লোকজন। বৈধ-অবৈধ সব উৎস থেকেই উত্তোলিত বালু এখান দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, নদীতীর কেটে উত্তোলন করা বালু থেকেও এই টোল আদায়ের নামে মোটা অঙ্কের অর্থ গ্রহণ করা হচ্ছে, যা সরাসরি পরিবেশবিরোধী কার্যক্রমকে প্রশ্রয় দিচ্ছে।
তাহিরপুর উপজেলার একাধিক গ্রামবাসী জানিয়েছেন, যাদুকাটা নদীর তীরকাটার কারণে ঝুঁকির মুখে পড়েছে অন্তত ২১টি গ্রাম। এ ঘটনায় এলাকায় মানববন্ধনসহ বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
শ্রমিক নেতা সাইফুল আলম সদরুল জানান, “৫ আগস্টের পর থেকেই বালু ও পাথর লুট শুরু হয়েছে। উচ্চ আদালতের আদেশের পর ইজারাদাররা আবার বালু উত্তোলন শুরু করলেও তারা নিজেরাই লুটের বালু থেকে কমিশন নিচ্ছেন।”
অপরদিকে ইজারাদার নাসির মিয়ার দাবি, “আমরা নদীর তীর কাটার বিরুদ্ধে শুরু থেকেই সোচ্চার। প্রশাসনের সহায়তায় অভিযানও চালানো হয়েছে। কিন্তু নদীতীরবর্তী ভূমির মালিকরা আমাদের বাধা মানছেন না।”
এ প্রসঙ্গে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী হাসান মানিক বলেন, “নদীর তীর কেটে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। একাধিক অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার ও মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রশাসন নদী রক্ষায় সর্বোচ্চ তৎপর রয়েছে।”
প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরে যাদুকাটা ১ ও ২ নম্বর বালু মহাল প্রায় ১০৭ কোটি টাকায় ইজারা দেওয়া হয়। তবে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা মামলা করায় শুরুতে উত্তোলন বন্ধ ছিল। মামলাটি উচ্চ আদালতে সরকারের পক্ষে রায় হওয়ায় সম্প্রতি বালু উত্তোলন ফের শুরু হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2025 surmapostnewsbd.com
Design & Developed BY Ohhre Technologies Limited.