সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:১৫ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার:::
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী যাদুকাটা নদীতে পাড় কাটার ঘটনায় বালু ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এ মামলা হয়েছে। গত বুধবার (১৬ অক্টোবর) তাহিরপুর থানায় দায়ের হওয়া মামলায় ৫১ জনের নাম উল্লেখসহ ৩০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
তবে এই মামলাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে বিতর্ক ও অসন্তোষ। স্থানীয়দের অভিযোগ-প্রকৃত পাড় কাটার হোতারা বাদ পড়েছেন, আর আন্দোলনকারী ও প্রতিবাদীদের অনেককেই আসামি করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লাউড়েরগড় গ্রামের জাহাঙ্গীর ডাক্তার এবং তার তিন ভাই মুহিনুর, নুরুল আলম ও সাহাঙ্গীর পাড় কাটা এলাকা সংলগ্ন ২২ নল জায়গা বিক্রি করেছেন। অথচ মামলায় তাদের নাম নেই। একজন তরুণ সাংবাদিক জানিয়েছেন, “এরা স্থানীয়ভাবে বালু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং বারবার জায়গা বিক্রির মাধ্যমে পাড় কাটাকে উৎসাহ দিয়েছে।” তবে জাহাঙ্গীর আলম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি একজন পল্লী চিকিৎসক। পাড় কাটায় আমার বা আমার ভাইদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।”
দৈনিক ইত্তেফাকের তাহিরপুর প্রতিনিধি আলম সব্বির বলেন, “এই মামলার তালিকায় অনেক প্রকৃত হোতার নাম নেই, আর অনেক নির্দোষ আন্দোলনকারীর নাম যুক্ত হয়েছে। এতে প্রক্রিয়াটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।”
ইজারাদার নাছির মিয়া বলেন, “স্থানীয় সাংবাদিক, গোয়েন্দা সংস্থা এবং নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ীই মামলার তালিকা করা হয়েছে। কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে হয়রানি করা হয়নি।”
তাহিরপুর থানার ওসি মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, “তদন্তে যাদের দোষ প্রমাণিত হবে, তারা চার্জশিটে আসবে। নাম বাদ গেলেও তদন্তে ধরা পড়লে যুক্ত করা হবে। নির্দোষ কেউ হয়রানির শিকার হবে না।”
ঘটনার সূত্রপাত হয় ১৫ অক্টোবর (মঙ্গলবার) রাত ১২টার পর। আকস্মিকভাবে দুই থেকে আড়াই হাজার বাল্কহেড যাদুকাটায় প্রবেশ করে। প্রতিটি বাল্কহেডে ১০-১৫ জন শ্রমিক ছিল। তারা বিজিবির লাউড়েরগড় ক্যাম্পের কাছাকাছি থেকে শুরু করে সাহিদাবাদ পর্যন্ত নদীর পাড় কেটে বালু উত্তোলন করে নিয়ে যায়।
প্রায় আড়াই কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১০০ ফুট প্রস্থে পাড় কাটা হয়। এতে নদীর প্রাকৃতিক গঠন এবং পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, “এমন ঘটনা আকস্মিক ছিল, আমরাও অবাক হয়ে যাই।” পরদিনই বিজিবি বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে লিখিতভাবে অবহিত করে।
স্থানীয় প্রশাসন মামলা করলেও, প্রশ্ন উঠেছে- আসামী নির্বাচনে কি নিরপেক্ষতা ছিল? আন্দোলনকারীদের টার্গেট করা হলো কেন? প্রকৃত হোতা বাদ পড়ল কীভাবে?
নদীর পাড় কেটে প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস করার দায় কোনোভাবেই এড়ানো যায় না। কিন্তু সেই অপরাধের বিচার চাইতে গিয়ে যদি নির্দোষ মানুষ মামলার ফাঁদে পড়েন, তাহলে তা হবে বিচারের অপব্যবহার। প্রশাসনের উচিত, মামলার তদন্ত স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে পরিচালনা করা, যাতে প্রকৃত দোষীরা শাস্তি পায়, এবং সামাজিক আন্দোলনকারী বা সাধারণ নির্দোষ মানুষ হয়রানির শিকার না হন।